অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকে সালিশি মামলা করেছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম (এস আলম)।
তার ভাষ্য, অর্থপাচারের অভিযোগ তুলে সেগুলো ফিরিয়ে আনার যেসব উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, তাতে তাদের পারিবারিক ব্যবসায় ‘কোটি কোটি ডলার’ ক্ষতি হয়েছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা বিশ্ব ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্রে (আইসিএসআইডি) সালিসি আবেদনটি জমা দেন। আবেদনে এস আলমের পরিবার দাবি করেছে, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব স্থগিত এবং কোম্পানির বাজারমূল্য ধ্বংস করতে ‘উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা’ চালিয়েছে। পাচারের অর্থ ফিরিয়ে আনতে ইউনূস সরকারের যে প্রচেষ্টা, তাতে এই মামলা বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির হালচাল জানতে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তিন মেয়াদে ২৪০ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ হাজার কোটি ডলার বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম পরিবারের হাতেই ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের। কিন্তু এস আলম বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের এই অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।
এস আলমের পরিবারের আইনজীবীরা গেল ডিসেম্বরে ইউনূস সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, ছয় মাসের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা না হলে তারা সালিশি মামলা করবে। মামলায় আইনজীবী কুইন ইমানুয়েল ইউরকুহার্ট ও সুলিভান অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম পরিবারের অনেক সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। তাদের ব্যবসা নিয়ে ‘ভুয়া তদন্ত’ চালানোর পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে উসকানিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগও এনেছেন আইনজীবীরা।
মামলায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এসব পদক্ষেপে এস আলম পরিবারের ‘কোটি কোটি ডলারের’ ক্ষতি হয়েছে। এস আলম পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, “বিষয়টি আমাদের কাছে এলে আমরা যথাথম মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য জানাব।”
এ বিষয়ে বক্তব্য চাইলেও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কোনো সাড়া দেয়নি বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়। সালিশি মামলাটি হয়েছে ২০০৪ সালের বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে।
২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিক ত্যাগ করেন এস আলম পরিবারের সদস্যরা। এরপর ২০২১ ও ২০২৩ সালের মধ্যে তারা সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব পান।
সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে এস আলম পরিবার বলছে, বাংলাদেশের ১৯৮০ সালের বেসরকারি বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী তারা সুরক্ষা পাওয়ার যোগ্য।
আহসান এইচ মনসুরের অভিযোগ, এস আলম ও তাদের সহযোগীরা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ব্যাংক দখল করে ঋণ ও মিথ্যা বিলের মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন।
“তারা যে টাকা সরিয়েছেন, সে বিষয়ে আম অনেক প্রমাণ পেয়েছি।”
তবে সালিসি মামলার আবেদনে এস আলম পরিবার দাবি করেছে, টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ অন্তর্বর্তী সরকার দেখাতে পারেনি।

এবিএন ডেস্ক 


















