বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত টেকনাফ উপজেলা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড় ও সমুদ্রের মিলনস্থল এবং বৈচিত্র্যময় কৃষিজ সংস্কৃতির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এই এলাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কৃষিপণ্য হলো সুপারী। শত শত বছর ধরে টেকনাফের মানুষের জীবনে সুপারী শুধু একটি ফল নয়, এটি অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে।
🌾 সুপারী চাষের ইতিহাস
টেকনাফে সুপারী চাষের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। অতীতে স্থানীয় মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে বাড়ির পাশে সুপারী গাছ লাগাতেন। ধীরে ধীরে এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়তে থাকে। আজ টেকনাফের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ছোট-বড় অসংখ্য সুপারী বাগান দেখা যায়। স্থানীয় কৃষকরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ঐতিহ্য রক্ষা করে আসছেন।
🌿 আবহাওয়া ও মাটির উপযোগিতা
টেকনাফের আবহাওয়া ও মাটির প্রকৃতি সুপারী চাষের জন্য আদর্শ। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট এবং পাহাড়ি ঢালু ভূমির মাটি সুপারী গাছের জন্য উপযোগী। সমুদ্রবায়ুর হালকা লবণাক্ততা গাছের ফলকে করে তোলে শক্ত ও সুস্বাদু। তাই টেকনাফের সুপারী মানে আলাদা পরিচয়ের এক ব্র্যান্ড।
💰 অর্থনৈতিক গুরুত্ব
সুপারী টেকনাফের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানকার হাজারো পরিবার সুপারী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। মৌসুমে স্থানীয় বাজারগুলোতে সুপারী বিক্রির জোয়ার দেখা যায়। শুধু টেকনাফ নয়, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে টেকনাফের সুপারীর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। অনেক পরিবার সুপারী চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
👨🌾 কৃষকের পরিশ্রম ও নিবেদন
সুপারী বাগানের প্রতিটি গাছ যেন কৃষকের পরিশ্রমের গল্প বলে। চারা রোপণ, পরিচর্যা, গাছ পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, ফল সংগ্রহ — প্রতিটি ধাপেই প্রয়োজন যত্ন ও অভিজ্ঞতা। টেকনাফের পরিশ্রমী কৃষকরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
🌺 সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
টেকনাফের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে সুপারীর রয়েছে বিশেষ স্থান। বিয়ে-শাদি, অতিথি আপ্যায়ন বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পান-সুপারী ছাড়া যেন কিছুই সম্পূর্ণ হয় না। এটি অতিথিপরায়ণতার প্রতীক, আন্তরিকতার প্রকাশ। তাই বলা যায়, সুপারী টেকনাফবাসীর সংস্কৃতি ও হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আব্দুর রহমান জামী, টেকনাফ প্রতিনিধি 

























