যমুনা রেলসেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে— এমন খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন নিউজপোর্টাল, পত্রিকা ও টেলিভিশনে নানা তথ্য প্রচারিত হলেও সরেজমিনে গিয়ে বড় ধরনের কোনো ফাটলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেতুর পিলারে কোনো স্পট বা ফাটল নেই; তবে পায়ার ক্যাপের কিছু অংশে চিঁরচিঁরে বা ফাটল সদৃশ চিহ্ন দেখা গেছে।
গত ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় যমুনা রেলসেতুর। উদ্বোধনের মাত্র সাত মাসের মধ্যেই সেতুতে ফাটলের অভিযোগ ওঠে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর গুজবে পরিণত হয়। কেউ কেউ সেতু ভেঙে পড়ার ভুয়া ছবি ছড়িয়ে দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব চিহ্ন আদৌ ফাটল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সেতুর মূল পিলার অক্ষত রয়েছে। তবে পায়ার ক্যাপের কিছু অংশে হালকা চিঁরচিঁরে অবস্থা চোখে পড়ে। প্রকল্প পরিচালক আবু ফাত্তাহ বলেন, পায়ার ক্যাপে ঢালাইয়ের ওপরে একটি আস্তরণ রয়েছে। তাতে কিছুটা চিঁরচিঁরে দাগ দেখা গেছে, তবে এটি মূল কাঠামোর কোনো ক্ষতি করবে না।
তিনি আরও বলেন, পাথর অত্যন্ত শক্ত এবং ক্ষয় সহনশীল; তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে উপরের স্তরে সামান্য চিঁরচিঁরে ভাব দেখা দিতে পারে।
নতুন এই রেলসেতুতে রয়েছে দুই লাইন (ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক)। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এর একটি লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মূল সেতু পার হতে ট্রেনের সময় লাগে দুই থেকে তিন মিনিট। সয়দাবাদ ও ইব্রাহিমাবাদ স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার, যা পার হতে লাগে সাত মিনিটের মতো। আগে যমুনা সড়কসেতু পার হতে সময় লাগত ২০ থেকে ২৫ মিনিট।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর চালু হয় সড়কসেতু, যেখানে শেষ মুহূর্তে রেললাইন যুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৬ সালে সেতুতে ফাটল ধরা পড়লে ট্রেন চলাচলে গতি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়, ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয় ট্রেনের গতি।
এই সমস্যার সমাধানেই সরকার নতুন পৃথক রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায়। মেয়াদও বাড়ানো হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত।
প্রকল্পের শুরুতে এর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের ডিসেম্বরে এর নাম পরিবর্তন করে যমুনা রেলসেতু রাখা হয়। ৫০টি পিলারের ওপর নির্মিত ৪৯টি স্প্যানের এই সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলার উপযোগিতা থাকলেও সংযোগ লাইন এখনো একমুখী হওয়ায় আপাতত ধীর গতিতেই চলছে ট্রেন।

অমিত হাসান রবিন টাঙ্গাইল 


















