১০:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
স্বপ্নভঙ্গের তিতা স্বাদ

প্রতারণার শিকার নুরুন নাহারের জীবনের নতুন লড়াই কফির কাপে

টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌর শহরের ব্যস্ত বাজার আর ফুটপাতজুড়ে প্রতিদিন দেখা মেলে এক দৃঢ়চেতা নারীর। হাতে কফির কেতলি, পাশে ছোট্ট চিনি ও কফির ডিব্বা—এই নিয়েই নুরুন নাহারের দিন শুরু হয় ভোরের আলো ফুটতেই। জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাকে যেমন হারিয়ে দিয়েছে, তেমনি শিখিয়েছে বাঁচার নতুন পাঠ।

একসময় নুরুন নাহার ছিলেন শিক্ষিতা, স্বপ্নবাজ ও কর্মঠ নারী। বিদেশে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু ২০২৩ সালে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় শামীম আবেদীন নামের এক প্রতারকের সঙ্গে। সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর প্রলোভনে তিনি হারান প্রায় ৮ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, তার অজান্তেই ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে কোটি টাকার লেনদেন হয়, যার দায়ভারও পরে তার কাঁধে এসে পড়ে।

প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়ে নিঃস্ব হন তিনি। বিদেশে যাওয়ার সমস্ত কাগজপত্র, ভিসা—সবই ছিল ভুয়া। দেশে ফিরে যখন সব ধরা পড়ে, তখন আত্মীয়-স্বজন সবাই দূরে সরে যায়। একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আসে লিগ্যাল নোটিশ। জীবনের সব পথ যেন বন্ধ হয়ে আসে তার সামনে।

হতাশায় ভেঙে পড়লেও শেষ পর্যন্ত হার মানেননি নুরুন নাহার। বিষ খাওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে ফিরিয়ে আনে নতুন পথে।

অনলাইনে কফি বিক্রির একটি ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেন কফির ব্যবসা। চট্টগ্রাম থেকে একটি কফি মেশিন কিনে নিয়ে তিনি পা রাখেন নতুন জীবনের লড়াইয়ে। এখন প্রতিদিন বাজারে বাজারে ঘুরে বিক্রি করেন কফি। এভাবেই সংসারের খরচ চালান, আর প্রতারকের দায়ে চাপানো ঋণ শোধ করছেন ধীরে ধীরে।

নুরুন নাহার জানালেন, “আমার জীবনের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে, কিন্তু আমি লড়াই থামাইনি। কফির এই কাপে হয়তো টাকা কম আসে, কিন্তু এখানেই আছে আমার টিকে থাকার শক্তি।”

আজ মধুপুর শহরের রাস্তায় কফি বিক্রি করা এই নারী কেবল একজন বিক্রেতা নন—তিনি সংগ্রামী জীবনের এক অনন্য প্রতীক। প্রতারণায় হারানো জীবনের তিতা।

জনপ্রিয়

পালিয়ে গিয়েও হাসিনার সন্ত্রাস থামছে না: প্রেস সচিব

স্বপ্নভঙ্গের তিতা স্বাদ

প্রতারণার শিকার নুরুন নাহারের জীবনের নতুন লড়াই কফির কাপে

প্রকাশের সময় : ০২:১৯:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌর শহরের ব্যস্ত বাজার আর ফুটপাতজুড়ে প্রতিদিন দেখা মেলে এক দৃঢ়চেতা নারীর। হাতে কফির কেতলি, পাশে ছোট্ট চিনি ও কফির ডিব্বা—এই নিয়েই নুরুন নাহারের দিন শুরু হয় ভোরের আলো ফুটতেই। জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাকে যেমন হারিয়ে দিয়েছে, তেমনি শিখিয়েছে বাঁচার নতুন পাঠ।

একসময় নুরুন নাহার ছিলেন শিক্ষিতা, স্বপ্নবাজ ও কর্মঠ নারী। বিদেশে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু ২০২৩ সালে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় হয় শামীম আবেদীন নামের এক প্রতারকের সঙ্গে। সুইজারল্যান্ডে পাঠানোর প্রলোভনে তিনি হারান প্রায় ৮ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, তার অজান্তেই ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে কোটি টাকার লেনদেন হয়, যার দায়ভারও পরে তার কাঁধে এসে পড়ে।

প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়ে নিঃস্ব হন তিনি। বিদেশে যাওয়ার সমস্ত কাগজপত্র, ভিসা—সবই ছিল ভুয়া। দেশে ফিরে যখন সব ধরা পড়ে, তখন আত্মীয়-স্বজন সবাই দূরে সরে যায়। একপর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আসে লিগ্যাল নোটিশ। জীবনের সব পথ যেন বন্ধ হয়ে আসে তার সামনে।

হতাশায় ভেঙে পড়লেও শেষ পর্যন্ত হার মানেননি নুরুন নাহার। বিষ খাওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে ফিরিয়ে আনে নতুন পথে।

অনলাইনে কফি বিক্রির একটি ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেন কফির ব্যবসা। চট্টগ্রাম থেকে একটি কফি মেশিন কিনে নিয়ে তিনি পা রাখেন নতুন জীবনের লড়াইয়ে। এখন প্রতিদিন বাজারে বাজারে ঘুরে বিক্রি করেন কফি। এভাবেই সংসারের খরচ চালান, আর প্রতারকের দায়ে চাপানো ঋণ শোধ করছেন ধীরে ধীরে।

নুরুন নাহার জানালেন, “আমার জীবনের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে, কিন্তু আমি লড়াই থামাইনি। কফির এই কাপে হয়তো টাকা কম আসে, কিন্তু এখানেই আছে আমার টিকে থাকার শক্তি।”

আজ মধুপুর শহরের রাস্তায় কফি বিক্রি করা এই নারী কেবল একজন বিক্রেতা নন—তিনি সংগ্রামী জীবনের এক অনন্য প্রতীক। প্রতারণায় হারানো জীবনের তিতা।