বরগুনার তালতলী উপজেলায় চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রফিকের বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় জনতা। পচকোড়ালিয়া বাজারে অভিযুক্ত শিক্ষকের অবিলম্বে বরখাস্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।
অভিযোগ: হোয়াটসঅ্যাপে অশ্লীল বার্তা, রেজাল্ট খারাপ করার হুমকি
আরো পড়ুন:
অভিযোগে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে তারই বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হোয়াটসঅ্যাপে অশালীন বার্তা পাঠাতেন এবং বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রীটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ভিডিও মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে ছাত্রীটি জানায়, সে শিক্ষকের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শিক্ষক তাকে পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করার এবং ফরম ফিলাপ আটকে দেওয়ার হুমকি দেন। ছাত্রীটি জানায়, “তুমি কি চাও তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হোক… আমি চাইলে তোমার ইংলিশের রেজাল্ট খারাপ করতে পারি” । এছাড়া, নিজের কম বয়সের কথা উল্লেখ করে ছাত্রীটি শিক্ষককে জানায়, “আমার এখনো বয়স হয় নাই বিয়ের বয়সই হয় নাই… আমার ১৪ বছরও হয় নাই এখন পর্যন্ত”,
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে তার বাবা মেয়ের মোবাইল ফোন চেক করে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে আপত্তিকর বার্তা আদান-প্রদানের বিষয়টি দেখতে পান।
মানববন্ধনে ক্ষোভ ও দাবি
শিক্ষকের এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। মানববন্ধনে বক্তারা অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে অবিলম্বে বরখাস্ত এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, একজন শিক্ষক সমাজের আদর্শ হওয়ার কথা, অথচ রফিকুল ইসলাম তার দায়িত্ব ও অবস্থানকে কলঙ্কিত করেছেন। তাঁর মতো চরিত্রহীন ব্যক্তি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তারা অভিযুক্ত শিক্ষককে ‘শিক্ষক নামের কলঙ্ক’ ও ‘নরপশু’ হিসেবে আখ্যা দেন
-
ইউপি সদস্য মো. মজিবর রহমান বলেন, “একজন শিক্ষক হয়ে রফিকুল ইসলামের এই অনৈতিক আচরণ পুরো শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। এমন শিক্ষক থাকলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়।”
-
জাতীয়তাবাদী অটোরিকশা–ভ্যানচালক দলের সদস্য সচিব মো. মোতালেব মৃর্ধা প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
-
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, তাঁরা ন্যায়বিচার দাবি করায় উল্টো তাঁর মেয়ের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি প্রশাসনের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
-
ভুক্তভোগী ছাত্রীটির দাদা মো. কালাম তালুকদার জানান, “আমার নাতনির মানসিক অবস্থা খুব খারাপ… আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।” তিনি আরও জানান, মামলা নিতে থানা রাজি না হওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা করেছেন। বর্তমানে মামলাটি জেলা প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বরগুনা প্রতিনিধি 


















