০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, মূল অপরাধীরা ভারতে পালিয়েছেন: আইনজীবী

  • এবিএন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • 179

ছবি সংগৃহিত

মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, এই মামলার মূল অপরাধীরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি হিসেবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ট্রাইব্যুনাল আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে এই সেনা কর্মকর্তাদের ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৫ আসামির আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে সেনা সদরের আদেশে সংযুক্তকৃত ১৫ জন অফিসার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আজকে স্বেচ্ছায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সারেন্ডার করেছেন। তারা অনেক সিনিয়র অফিসার, অভিজ্ঞ অফিসার… তারা সবাই আশা করেন, তারা এই আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন।’

প্রসিকিউশন এই সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার কথা জানালেও আইনজীবী সরোয়ার হোসেন তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা জানি তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু সেটা পুলিশের মাধ্যমে কোর্টে সারেন্ডার করেছেন, সেটাকে তারা বলেছেন যে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, আগে সেনা সদর ব্রিফিং করেছিল, সেখানে তারা বলেছে, তারা আর্মি হেফাজতে আছেন।

আইনজীবী সরোয়ার হোসেন দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘এই অফিসাররা অত্যন্ত আত্মবলে বলিয়ান এবং তারা নির্দোষ। তারা কোর্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে আশাবাদী।’ তিনি ইঙ্গিত করেন যে, যারা সত্যিকারের অপরাধ সংঘটন করেছেন, তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আইনজীবী পালিয়ে যাওয়া এই অপরাধীদের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা হলেন ‘জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, জেনারেল তারিক সিদ্দিকী, জেনারেল মুজিব।’

উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন। এরপর ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এই মামলাগুলোয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনও আসামি। এর মধ্যে আল–মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আইনজীবী সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, ‘সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অ্যাপ্রুভার। তিনি বলেছেন, যা কিছু হয়েছে, তা শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের নির্দেশে হয়েছে। এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’

আত্মসমর্পণকারী ১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।

জনপ্রিয়

সাংবাদিক ঐক্য ফেডারেশন, টাঙ্গাইল-এর উদ্যোগে বনভোজন ও পরিচিতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, মূল অপরাধীরা ভারতে পালিয়েছেন: আইনজীবী

প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেছেন, এই মামলার মূল অপরাধীরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি হিসেবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ট্রাইব্যুনাল আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে এই সেনা কর্মকর্তাদের ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৫ আসামির আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে সেনা সদরের আদেশে সংযুক্তকৃত ১৫ জন অফিসার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আজকে স্বেচ্ছায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সারেন্ডার করেছেন। তারা অনেক সিনিয়র অফিসার, অভিজ্ঞ অফিসার… তারা সবাই আশা করেন, তারা এই আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন।’

প্রসিকিউশন এই সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার কথা জানালেও আইনজীবী সরোয়ার হোসেন তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা জানি তারা আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু সেটা পুলিশের মাধ্যমে কোর্টে সারেন্ডার করেছেন, সেটাকে তারা বলেছেন যে তারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, আগে সেনা সদর ব্রিফিং করেছিল, সেখানে তারা বলেছে, তারা আর্মি হেফাজতে আছেন।

আইনজীবী সরোয়ার হোসেন দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘এই অফিসাররা অত্যন্ত আত্মবলে বলিয়ান এবং তারা নির্দোষ। তারা কোর্টের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে আশাবাদী।’ তিনি ইঙ্গিত করেন যে, যারা সত্যিকারের অপরাধ সংঘটন করেছেন, তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গেছেন।

আইনজীবী পালিয়ে যাওয়া এই অপরাধীদের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা হলেন ‘জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, জেনারেল তারিক সিদ্দিকী, জেনারেল মুজিব।’

উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন। এরপর ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এই মামলাগুলোয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনও আসামি। এর মধ্যে আল–মামুন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আইনজীবী সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, ‘সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অ্যাপ্রুভার। তিনি বলেছেন, যা কিছু হয়েছে, তা শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের নির্দেশে হয়েছে। এখানে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।’

আত্মসমর্পণকারী ১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।