বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেছেন, “আমরা ব্রিজ দিতে পারি, রাস্তা দিতে পারি, স্কুল দিতে পারি—কিন্তু জামায়াতের মতো জান্নাতের টিকিট দিতে পারি না। জান্নাতের মালিক আমি নই, মহান আল্লাহ। কেউ যেন আমার কাছে এমন কিছু না চায়।”
আজ শনিবার দুপুরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুলু ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বিরোধী দলের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, তাদের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত করছে যে, তাদের প্রতীকে ভোট না দিলে নাকি ইসলামের বা কোরআনের বিজয় হবে না। এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নাউজুবিল্লাহ! এরা কী বলছে? এসব বক্তব্য থেকে সরে আসুন, মানুষকে আর ধোঁকা দেবেন না এবং কুফরি বক্তব্য পরিহার করুন।”
তিনি আরও বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। একই সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও তার খোঁজখবর নিয়েছেন। এ ঘটনায় তারেক রহমান নিন্দা জানিয়েছেন এবং বিএনপির মহাসচিব তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দুলু বলেন, নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। এখনো যেসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছে এবং এই সময়ে দলটি বহু সহযোদ্ধাকে হারিয়েছে। বিএনপি চায় না নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটুক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ যাকে নির্বাচিত করবে, তাকেই আমরা স্যালুট করব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে কোনো ভয় থাকা চলবে না। নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়—এ জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”
জুলাই আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলে ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করে দুলু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কখনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেন না। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিগত সময়ে বলেছেন—বিজয়ীরা যদি পরাজিত শক্তির ওপর প্রতিশোধ নেয়, তবে বিজয়ের আনন্দ থাকে না। এত জুলুম-নির্যাতনের পরও তিনি কখনো প্রতিশোধের কথা বলেননি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় দেশবাসী বুঝে গেছে যে নির্বাচন সামনে রয়েছে উল্লেখ করে দুলু বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, আসন্ন নির্বাচনে জনগণ আনন্দের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবে। তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন যতবারই হয়েছে, ততবারই বিএনপি বিজয়ী হয়েছে। জনগণ ধানের শীষ, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাইকে নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে, জনগণের সঙ্গে সদাচরণ করতে হবে এবং ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি হাদীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা দুর্বৃত্তদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক, সহ-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবিএম ফারুক সিদ্দিকী, পৌর বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিন্নাত ফেরদৌস আরা রোজি, সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান আরা শাপলাসহ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এস,আর শরিফুল ইসলাম রতন, স্টাফ রিপোর্টার 




















