আজ ৩ ডিসেম্বর, ঠাকুরগাঁও পাক-হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় উত্তরের প্রত্যন্ত এই জনপদ। সে সময় ঠাকুরগাঁও ছিল দিনাজপুর জেলার একটি মহকুমা, বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় নিয়ে গঠিত ১০টি থানাই ছিল এই মহকুমার অন্তর্ভুক্ত।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই ঠাকুরগাঁওবাসী গড়ে তুলেছিল দুর্বার প্রতিরোধ। এই সম্মিলিত প্রতিরোধের শক্তিতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ের মাটিতে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে ১৫ এপ্রিল সকাল থেকেই পরিস্থিতি বদলে যায়। ১০টি ট্রাক ও ৮টি জিপে করে পাকবাহিনী মুহুর্মুহু শেল বর্ষণ করতে করতে নগরীতে ঢুকে পড়ে।
এদিকে তেঁতুলিয়া এলাকায় গড়ে ওঠা প্রায় ১৫০ বর্গমাইলজুড়ে মুক্তাঞ্চলকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হন ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। তারা পাকসেনাদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে ফেলতে থাকে বিভিন্ন ফ্রন্টে।
২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় মুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। পরদিন ৩০ নভেম্বর পিছু হটে তারা ঠাকুরগাঁওয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে এবং কৌশলগত কারণে ভুল্লী ব্রিজে বোমা মেরে তা ধ্বংস করে, সালন্দর এলাকায় ছড়িয়ে দেয় মাইন। মিত্রবাহিনী দ্রুত ভুল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাঙ্কসহ যুদ্ধসামগ্রী নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
২ ডিসেম্বর রাতজুড়ে চলে প্রবল গোলাগুলি ও সম্মুখ লড়াই। টানা যুদ্ধের মুখে পাকসেনারা পিছু হটে ‘২৫ মাইল’ এলাকায় গিয়ে থামে। অবশেষে ৩ ডিসেম্বর ভোরে বিজয়ীর বেশে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে। মুক্তির আনন্দে ফেটে পড়ে জনপদ।
আজও এই দিনে শহীদদের আত্মত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা ও জনগণের ঐকান্তিক প্রতিরোধ স্মরণ করে পালন করা হয় ঠাকুরগাঁও পাক-হানাদার মুক্ত দিবস।

নাজিমুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি 






















