রাঙামাটি জেলার শিক্ষা খাতের উন্নয়ন, শিক্ষক সংকট নিরসন, অবহেলিত পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ শিক্ষা সংস্কারের দিকনির্দেশনা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯৯ নং রাঙামাটি সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম জেলা জজ ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ–ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ানের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (১৫ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় রাঙামাটি শহরের তার নিজ বাসভবন প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী সভাস্থলে শিক্ষক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মাইনুদ্দিন ভূইয়া এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শিবলী শান্তি চাকমা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, শিক্ষা কর্মীবৃন্দ এবং শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ইকরামুল ইসলাম বেলাল৷ নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়সিম বড়ুয়া, জীবতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়সাল আহমেদ, রাঙামাটি শহর, বরকল, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, কাপ্তাইসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষকবৃন্দ।
শিক্ষকবৃন্দ সভায় রাঙামাটির শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা, সংকট ও করণীয় তুলে ধরেন।
নুরুল হুদা কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়সিম বড়ুয়া বলেন, “বর্তমান দেশের পরিস্থিতিতে শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষের মূল দাবি, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সুশাসনের নিশ্চয়তা। এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী নেতৃত্ব। আমাদের বিশ্বাস, ধানের শীষে ভোট প্রদানই সব সমস্যার সমাধানের পথ তৈরি করবে।”
জীবতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়সাল আহমেদ বলেন, “পার্বত্য জেলায় শিক্ষার্থীরা ঢাকার মতো সুযোগ-সুবিধা পায় না। তাই রাঙামাটিতে আলাদা শিক্ষা বোর্ড গঠন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, আধুনিক ল্যাব, বিএড ও এমএড কলেজ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। আমরা চাই আপনি নির্বাচিত হয়ে এ দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিন।”
এ ছাড়া শিক্ষকরা আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন—
স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক সংকট দূরীকরণ
পার্বত্য শিক্ষকদের পদোন্নতি কাঠামো সমন্বয়
দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা
ডিজিটাল ল্যাব, লাইব্রেরি, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ
স্কুলগামী ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিরাপদ পরিবেশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সুবিধা বৃদ্ধি
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান বলেন, “পার্বত্য রাঙামাটির উন্নয়নের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। অথচ এই জেলার মাধ্যমিক শিক্ষকরা শিক্ষার প্রধান বাহক হয়েও সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। শিক্ষকরা যদি সম্মান না পান, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ কখনোই আলোকিত হতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছি, সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছি। এখন জনগণের ভোটে সুযোগ পেলে আমি শপথ করে বলছি—শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করব। রাঙামাটি জেলা থেকে শুরু করে পার্বত্য তিন জেলায় আলাদা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, বিএড–এমএড কলেজ স্থাপন, প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারে বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা যদি আমাকে আপনারা একজন অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে রাঙামাটির শিক্ষা কাঠামোকে বদলে দিতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।”
সভায় বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন, দীপেন দেওয়ানের স্ত্রী, সাবেক শিক্ষক ও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী মিসেস মৈত্রী চাকমা।
তিনি শিক্ষক সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে আমরা সবসময় পাশে থাকব।”

নোমাইনুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি 

























