অতীতের দাসপ্রথা না থাকলেও আধুনিক যুগে এসে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী শ্রমবাজার যেখানে দিনমজুররা নিজেদের শ্রম ‘বিক্রি’ করতে ভোর থেকে সমবেত হন। ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় এসব বাজারে এখন শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা।
সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোল, কান্দাপাড়া, কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়া, আলমপুর, পানাগাড়ি, রতনকান্দি ও সোনামুখী এলাকায় এমন শ্রমবাজার এখন জমজমাট। নির্দিষ্ট স্থান-বাজারের ধারে বা খোলা জায়গায় ভোর থেকেই জড়ো হন শ্রমিকেরা।
কেউ হাতে বাঁশের তৈরি বাইং, কারও হাতে ব্যাগ, যার ভেতরে থাকে কিছু কাপড় আর ধান কাটার কাঁচি। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে কাজের অপেক্ষায়। হাটে ঢুকতেই ভেসে আসে ডাক, “মামা, কামলা লাগবো? কত কইরা নিবেন?”
শ্রম বিক্রি হয় দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। তবে অনেকেই পুরো দিন অপেক্ষার পরও কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
নাটুয়ারপাড়া হাটে রংপুর থেকে আসা ৫০ বছর বয়সী শ্রমিক আবু হোসেন বলেন, পরিবারের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় লেখাপড়া করতে পারিনি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁচার তাগিদে প্রতি বছরই এখানে ধান কাটতে আসি। কখনো ৫০০, কখনো ৭০০ টাকায় মালিকেরা আমাদের নিয়ে যায়। তবে অনেক সময় কাজ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়।
তিনি আরও জানান, বছরের পর বছর আসায় জমির মালিকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাই মৌসুমে নিয়মিত কাজ পান।
শিয়ালকোলের শ্রমিক আবদুর রশিদ (৪৫) সাতজনের একটি দল নিয়ে হাটে এসেছিলেন। বলেন, বিধবা মা, তিন বোন, স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য এই পথ বেছে নিতে হয়েছে।
১৭ বছরের কিশোর জেলহক জানায়, বাড়িতে শুধু বিধবা মা। তাকে চালাতে আমার কাজ করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বয়স কম বলে কেউ নিতে চায় না, অল্প দামে বিক্রি হতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালিকেরা সকাল থেকেই হাটে আসেন। শ্রমিকের বয়স, শক্তি ও কাজের অভিজ্ঞতা দেখে দর হাঁকেন। কারও দাম ওঠে ৪০০ টাকা, কারও ৬০০ টাকা। কোথাও মজুরি দেওয়া হয় নগদ, কোথাও ধানের ভাগে। দূর থেকে আসা শ্রমিকদের তিন বেলা, আর স্থানীয় শ্রমিকদের একবেলা খাবার দিয়ে কাজে নেওয়া হয়। প্রতি মৌসুমে ২–৩ মাস এসব শ্রমিক ধান কাটার কাজ করেন।
নাটুয়া পাড়া হাটে কামলা নিতে আসা আব্দুস ছামাদ জানান, চাহিদামত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের দর দাম মিটিয়ে নেই কামলাদের । স্থানীয়দের একবেলা এবং দুরে শ্রমিকদের তিন বেলা খেতে দিতে হয়।প্রতিটা বাড়িতে প্রতি মৌসুমে ২/৩ মাস কাজ হয়। কাজ শেষে শ্রমিকেরা নিজ নিজ এলাকায় চলে যান। তবে মজুরীর ক্ষেত্রে কোন এলাকায় নগদ আবার কোন এলাকায় ধান দেয়া হয়।
কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া হাট বাজার ইজারাদার আব্দুল লতিফ সরকার জানান, বহু বছর ধরে এই হাটে মানুষ বেচাকেনার হাট বসে। এখান থেকে প্রতিদিন মালিকেরা এসে কামলা কিনে নিয়ে যায়।

এবিএন ডেস্ক 



















